টাকা ঢেলেও বাতাসের মান সুরক্ষায় ফল শূন্য

ঢাকায় বায়ুদূষণ রোধ করতে সরকারের পক্ষ থেকে ব্যয়ের কোনো কমতি নেই। বরং এ খাতে খরচ বাড়ছে পাল্লা দিয়েই। তারপরেও বাতাসের মান সুরক্ষায় কোনো ফল মিলছে না। তবে দূষণ কেন কমছে না সে বিষয়ে সদুত্তর নেই সংশ্লিষ্টদের কাছে। 

পরিবেশবিদরা বলছেন, রাজধানী ঢাকার বাতাসের মান অব্যাহতভাবে বিপজ্জনক অবস্থানে থাকার প্রধান কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে চলমান একাধিক মেগা প্রজেক্ট এবং সিটি করপোরেশনের ময়লা-আবর্জনা। এই দুই ক্ষেত্রেই পরিবেশের ক্ষতি না করার জন্য সুনির্দিষ্টভাবে অর্থ বরাদ্দ আছে। বরাদ্দ করা অর্থ অব্যাহতভাবে ছাড়ও হচ্ছে। কিন্তু তাতে পরিবেশের ক্ষতি রোধ হচ্ছে না বা এক কথায় বায়ুদূষণ বিপজ্জনক অবস্থাতেই রয়ে যাচ্ছে।

বায়ুদূষণের বিষয়ে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং বায়ুমান গবেষণা প্রতিষ্ঠান ক্যাপসের প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালক অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার বলেন, বড় ছোট সব প্রকল্পেই যে বরাদ্দ থাকে, তার একটি অংশ থাকে পরিবেশের ক্ষতি যেন না হয়, তা নিশ্চিত করার জন্য। যেমন- যেখানে কাজ চলছে, সেটি ঢেকে রাখা, যেন ধুলাবালি উড়তে না পারে। কিন্তু এটি মানা হয় না।

তিনি বলেন, উন্নত দেশেও উন্নয়নমূলক কাজ হয়। সেখানে পরিবেশের সুরক্ষায় যেমন বরাদ্দ থাকে। আমাদের এখানেও থাকে। সেখানে যেমন পরিবেশের বিষয়ে কঠিন শর্ত দেওয়া থাকে, আমাদের এখানেও থাকে। তাদের ক্ষেত্রে এই শর্ত নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠানগুলো মেনে চলে। কিন্তু আমাদের ক্ষেত্রে তা করে না।

তিনি আরও বলেন, নজরদারিও হচ্ছে, গত সপ্তাহেও বড় প্রকল্পগুলোকে ১০ লাখ টাকার মতো জরিমানা করা হয়। কিন্তু তাতেও তাদের আইন মানতে অনীহা রয়েছে। আগেও তাদেরকে জরিমানা করা হয়েছিল। কিন্তু অতি মুনাফার লোভে তারা আইন মানছে না।

একই অপরাধ বারবার করা প্রসঙ্গে ড. আহমদ বলেন, আইনের কঠোর প্রয়োগের দিকে যেতে হবে। জরিমানায় কাজ না হলে জেল-জরিমানায় যেতে হবে।

উল্লেখ্য, বিশেষ করে শীতকালে শহরময় বিভিন্ন স্থানে ময়লা পোড়াতে দেখা যায়। যার ফলে ময়লা পোড়ানোর স্থান থেকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ধোঁয়া ছড়াতে থাকে। অথচ এসব ময়লা সিটি করপোরেশনের গাড়িতে করে নিয়ে নির্দিষ্ট স্থানে ফেলার জন্য অর্থ বরাদ্দ হয়। কিন্তু ময়লার ওজন ও পরিমাণ কমানোর জন্যে ময়লার ভাগাড়ে আগুন জ্বালিয়ে রাখা হয়। যার ফলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ধোঁয়ায় আচ্ছাদিত হয়ে থাকে একেকটি এলাকা।

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং জনস্বাস্থ্যবিদ অধ্যাপক লেলিন চৌধুরী বলেন, অবৈধ ইটভাঁটা বন্ধ করতে বা রাস্তায় পানি ছিটাতে হাইকোর্টকে নির্দেশ দিতে হয়। অথচ এটি তো কোর্টের কাজ না। এটি সিটি করপোরেশনসহ সেবা প্রতিষ্ঠানগুলো নিজেদের দায়িত্ব পালনে অবহেলা করছে বলে কোর্টকে নজর দিতে হচ্ছে।

তিনি বলেন, আইন মানানোর ক্ষেত্রে দুটি কাজ করতে হয়। একটি হচ্ছে আইন মানতে উদ্বুদ্ধ করা, আর অন্যটি হচ্ছে বাধ্য করা। উদ্বুদ্ধ করার কোনো উদ্যোগ আমাদের নেওয়া হয় না বললেই চলে। আর বাধ্য করার ক্ষেত্রে হচ্ছে, আর আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে যখন জরিমানার অঙ্কটি কারও গায়ে না লাগে এভাবে করা হয়। তখন একই অপরাধ বারবার করলে জরিমানার অঙ্কটি দ্বিগুণ তিনগুণ করা দরকার।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //